এবার পঞ্চায়েত ভোটে অবতীর্ণ হচ্ছে বৈরাগীরহাটের বৃহন্নলা সমাজের কর্ণধার পিংকি বর্মন!

0
160

খবরিয়া নিউজ ডেস্ক, ১৬ই জুন, মাথাভাঙা, মাথাভাঙ্গা থেকে কাজল রায়: পঞ্চায়েত ভোটে মাথাভাঙ্গায় বিজেপির প্রার্থী তালিকায় বড় চমক। জেলা পরিষদের নয় নম্বর আসনে বিজেপি ভোটের ময়দানে নামিয়ে দিল বৈরাগীরহাটের বৃহন্নলা সমাজের কর্ণধার পিংকি বর্মনকে। পিংকি বৃহস্পতিবার মাথাভাঙ্গা মহকুমা শাসকের দপ্তরে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এই আসনে গতবার জিতেছিলেন তৃণমূলের শুক্লা রায়বিশ্বাস। এবারও তাঁকে ওই আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। পিংকি শুক্লাদেবীর তুলনায় রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ। কিন্তু জেতার ব্যাপারে ১০০ শতাংশ আশাবাদী। পিংকির কথায়, ভিক্ষাবৃত্তি করেও সারা বছর মানুষের সেবা করি। আরও বৃহত্তর পরিসরে সেবা করার লক্ষ্যেই ভোটের আঙিনায় পা রাখলাম। মানুষের আশীর্বাদে ভোটে আমিই জিতব।

বিজেপির কোচবিহার জেলা সহ সভাপতি মনোজ ঘোষের বক্তব্য, “সেবামূলক কাজের জন্য পিংকি এলাকায় যথেষ্ট পরিচিত। উনি বিজেপির মতাদর্শেও বিশ্বাসী। ভোটে জিতে মানুষের সেবা করার সুযোগ করে দিতেই দল তাঁকে প্রার্থী করেছে। তিনি জিতবেন।’ যদিও তৃণমূলের মাথাভাঙ্গা-১(এ) সাংগঠনিক ব্লক সভাপতি মহেন্দ্রনাথ বর্মনের প্রতিক্রিয়া, “উন্নয়নের নিরিখে সাধারণ মানুষ তৃণমূলকেই ভোট দেবেন। তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে কে দাঁড়ালেন সেটা কোনও ফ্যাক্টর নয়। ওই আসনে তৃণমূল প্রার্থীই জিতবেন।’ শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে সেটা জানার জন্য আরও কিছুদিনের অপেক্ষা। কিন্তু তৃণমূলের “ওজনদার’ প্রার্থীর বিরুদ্ধে  ভোটের ময়দানে বৃহন্নলা সমাজের পিংকিকে দাঁড় করানোর ঘটনায় মাথাভাঙ্গার রাজনৈতিক মহলে ইতিমধ্যেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। ভোটের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন পিংকিই। উত্তরবঙ্গে বৃহন্নলা সমাজের বড় মা বলে পরিচিত সোনামণি শেখ। তিনি রাজ্য ট্রান্সজেন্ডার ডেভলপমেন্ট বোর্ডের সদস্যও। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। সমাজ হোক বা দেশের মানুষের সেবা ও উন্নয়নমূলক কাজ করতে লিঙ্গের বৈষম্য থাকা উচিৎ নয়। ভোটে জিতে পিংকি যদি জনপ্রতিনিধি হন তাহলে বৃহন্নলাদের ওপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস বাড়বে, বৃহন্নলারাও আরও অগ্রসর হতে পারবেন।’

দেশ ও দেশের বাইরেও ভোটে জিতে বৃহন্নলাদের জনপ্রতিনিধি হওয়ার উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু উত্তরবঙ্গে এমন নজির নেই। বৃহন্নলাদের সংগঠন সূত্রের খবর, বহুদিন আগে শিলিগুড়ি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের ভোটে ময়না দাস নামে এক বৃহন্নলা নির্দল প্রার্থী হিসাবে লড়েছিলেন। কিন্তু সামান্য মার্জিনে তিনি হেরে যান। এবার সেই পথেই হাঁটলেন পিংকি। ভোটে জিতলে পিংকিই হবেন বৃহন্নলাদের মধ্যে উত্তরবঙ্গের প্রথম নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। বৈরাগীরহাট বাজার সংলগ্ন এলাকায় অন্তত ৩০ জন বৃহন্নলা বাস করেন। বৃহন্নলাদের সংগঠন “জীবন গাড়ি ফেরিওয়ালা’-র কর্ণধার ৩২ বছরের পিংকি। এখানকার ১৪ জন বৃহন্নলার ভোটাধিকার রয়েছে। নবজাতকের মঙ্গল কামনা ও গানবাজনা করার মধ্য দিয়ে উপার্জিত অর্থেই পেট চলে তাঁদের। তবু সারা বছর নানা সেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত বৃহন্নলারা। বর্তমানে বাড়িতেই নিজেদের উদ্যোগে অনাথ আশ্রম তৈরি করছেন তাঁরা। কয়েকজন অসহায় বৃদ্ধাকে নিজেদের আশ্রয়ে রেখে অনেকদিন আগে থেকেই ভরণপোষণ দিচ্ছেন তাঁরা। পিংকিই বৃহন্নলাদের নেত্রী। এই পিংকি প্ৰথম বার ভোটের ময়দানে নামলেন। তাঁর প্রতিক্রিয়া, একটাই তো জীবন। নিজেদের পেট চালিয়ে যা সঞ্চয় হয় তা যদি মানুষের কাজে লাগে ক্ষতি কী ? এছাড়া ভোটে জিতলে আরও বেশি মানুষের সেবা করতে পারব। পঞ্চায়েত নির্বাচন ২০২৩ রাজ্যের কোথাও তৃতীয় লিঙ্গের কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হয়েছেন কিনা এটা এখনো জানা নেই। তবে উত্তরবঙ্গের মধ্যে একমাত্র পিংকি দেবী ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের লড়াই করছেন এ কথা নিশ্চিত। ফলাফলের জন্য আগামী জুলাই মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে দেখা যাক পিংকি বর্মনের শিখে ছিরে কিনা।

 

মাথাভাঙ্গা থেকে কাজল রায়ের রিপোর্ট!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here