কোচবিহার, ৫ আগস্ট: রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-র কোচবিহার সফর ঘিরে মঙ্গলবার তৈরি হল প্রবল উত্তেজনা, ধুন্ধুমার পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিভিন্ন দাবি নিয়ে কোচবিহার জেলা পুলিশ সুপারের দপ্তরে ডেপুটেশন জমা দিতে এদিন কোচবিহারে আসেন শুভেন্দু অধিকারী। তবে জেলায় প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই খাগড়াবাড়ি এলাকায় তাঁকে কালো পতাকা দেখানো হয়, ছোড়া হয় স্লোগান, এমনকি তাঁর কনভয় লক্ষ্য করে ইট ছোড়ার ঘটনাও ঘটে। কাচ ভাঙে একাধিক গাড়ির। ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকাজুড়ে।
বিজেপির অভিযোগ,তৃণমূলের মদতেই এই হামলা ঘটেছে। বিরোধী কণ্ঠকে রুখতেই তৃণমূল গুন্ডামি চালাচ্ছে। গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করতে গেলেই হামলার চেষ্টা হচ্ছে। ওই ঘটনার পরে শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও ডিজিপিকে চিঠি লিখেছেন বলেও সূত্রের খবর।
যদিও ওই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, “আমাদের কর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে ২০টি স্থানে কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। খাগড়াবাড়িতেও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ হচ্ছিল। শুভেন্দু অধিকারীর কনভয় ইচ্ছাকৃতভাবে দাঁড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। ওনার গাড়ি থেকেই লাঠি নিয়ে আমাদের শান্তিপ্রিয় কর্মীদের উপর হামলার চেষ্টা হয়। সেখানে একটা বিশৃঙ্খলা বা উত্তেজনা ছড়িয়েছে পড়ে। সেখানে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে কনভয় বের করে দিয়েছেন। এসব ঠিক নয়। উনি গণতান্ত্রিক ভাবে আন্দোলন করছেন,বাকিদেরও গণতান্ত্রিক ভাবে আন্দোলন করার অধিকার আছে বা তাঁদের করতে দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ শুভেন্দু অধিকারী যেখানে যাবেন সেখানে সবাই আপনার জন্য গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে রাখবেন, আপনি সেখানে গিয়ে অন্য দলের নেতা, কর্মীদের গালিগালাজ করবেন, আপনাকে কেউ কিছু বলবে পারবে না। আপনি মাইকে জয় বাংলা শ্লোগান শুনতে চাইবেন না। কেউ তৃণমূল করুক সেটা আপনি চান না। সেটা তো হয় না। আপনি আপনার কাজ করুন, অন্যান্য দলের কর্মীদের তাঁদের কর্মসূচী করতে দিন। কেন আপনি কনভয় নিয়ে এসে কতো গুলো পুলিশ, সিআরপিএফ এবং পার্টির কর্মীদের নিয়ে এসে দাঁড়িয়ে যাবেন কেন। এই মানসিকতার পরিবর্তন আনা দরকার। বিরোধী দলনেতাকে মানুষ এভাবে কেউ দেখতে চায় না। এছাড়াও তিনি যেখানে যান, সেখানেই গণ্ডগোল সৃষ্টি করেন। কোচবিহারে এসেও তাই করার চেষ্টা করেছে। এখানে পুলিশ সক্রিয় ছিল বলেই কোন রকম গণ্ডগোল করতে বা সৃষ্টি করতে পারে নি।”
ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, “যাঁরা বাংলা ভাষা ও বাংলার সংস্কৃতিকে অপমান করেন, তাঁদের মানুষ কালো পতাকাই দেখাবে। প্রতিটি জায়গায় আমাদের কর্মীরা এই প্রতিবাদ জানাবেন।”
উল্লেখ্য, বেশ কিছু দাবি নিয়ে কোচবিহারের এসপি অফিস অভিযানে যোগ দিতে কোচবিহারে আসেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কোচবিহারে ঢোকা মাত্র প্রবল বিক্ষোভের মুখে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তিনি খাগড়াবাড়ি পৌঁছতেই হাতে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে চোর স্লোগান তোলে একদল কর্মী সমর্থক। শুভেন্দুকে কালো পতাকা দেখানো এবং বিজেপি নেতার গাড়ি লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ইট, ভাঙে কাচ। সব মিলিয়ে রীতিমতো ধুন্ধুমার পরিস্থিতি। ঘটনার পরই মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও ডিজিপিকে চিঠি লেখেন শুভেন্দু বলে জানা গিয়েছে।