প্রদীপ কুন্ডু,তুফানগঞ্জ: এক পরিচিতের লোনের গ্যারান্টার হয়ে মহা বিপাকে তুফানগঞ্জের এক ব্যবসায়ী। ওই পরিচিত ব্যক্তি লোনের টাকা পরিশোধ করছেন না বলে অভিযোগ। ফলে লোনের টাকা পরিশোধের জন্য গ্যারেন্টারকে চাপ দিচ্ছে ঋণদাতা কোম্পানি। তবুও ঋণের টাকা পরিশোধ করতে রাজি নন ওই পরিচিত। এরফলে ওই গ্যারেন্টারকে আর ঋণ দিচ্ছে না কোনও সংস্থাই। বর্তমানে ওই ব্যবসায়ীর ব্যাংকের লেনদেনও প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি খুঁজতে ঋণ গ্রহণকারী বন্ধুকে স্বস্ত্রীক অপহরণ করে বলে অভিযোগ।যা নিয়ে রীতিমতো হইচই পড়েছে তুফানগঞ্জ জুড়ে।
অন্যদিকে, ওই গ্যারেন্টার তাঁর মা বাবাকে অপহরণ করেছে জানতে পেরে তুফানগঞ্জ থানার দ্বারস্থ হন অপহৃতের ছেলে। কিন্তু তুফানগঞ্জ থানায় এদিন অভিযোগ পত্র গ্রহণ করেনি বলেই অভিযোগ। বরং থানা থেকে বলা হয় বিষয়টি স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গে মিটিয়ে নিতে। ফলে তুফানগঞ্জ থানার ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
যদিও এই নিয়ে তুফানগঞ্জ এসডিপিও বৈভব বাঙ্গার বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।জানা গিয়েছে, ব্যবসায়িক সূত্রে অসমের ধুবড়ি জেলার ছাগলীয়া এলাকার বাসিন্দা মফিজ উদ্দিন মিয়া এবং তুফানগঞ্জের নাককাটি গাছ গ্রাম পঞ্চায়েতের চামটার বাসিন্দা একরামুল হকের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আজ থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে অসমের মফিজ উদ্দিন মিয়া এক বেসরকারি সংস্থা থেকে চার লক্ষ টাকা লোন নিয়ে একটি লরি কিনেছিলেন। সেই সময় ওই বন্ধুর লোনের গ্যারান্টার হয়েছিলেন তুফানগঞ্জে ব্যবসায়ী একরামুল হক।
এদিকে, গত বছর দুর্ঘটনার কবলে পড়লে লরিটিকে বাজেয়াপ্ত করে অসমের বালাজান থানার পুলিশ। এখনও বাজেয়াপ্ত অবস্থাতেই রয়েছে ওই লরিটি। তারপর থেকে ওই গাড়ির মালিক লোনের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ। এরপর ঋণদাতা কোম্পানি লরির মালিক মফিজের কাছে কিস্তির টাকা চাইলেও নির্দিষ্ট সময়ে তা শোধ করছিলেন না। এরপরে সেই কোম্পানির লোকজন লোনের গ্যারেন্টার একরামুলের কাছে সেই কিস্তির টাকা দাবি করে। এরপর একরামুলও লোনের টাকা পরিশোধের জন্য মফিজকে নানা রকম ভাবে বোঝাতে শুরু করে। তবুও সে লোনের টাকা পরিশোধ না করায় চরম বিপাকে পড়েন একরামুল। এই ঘটনায় নিয়ে অসমের ছাগুলিয়া গ্রামে একাধিকবার বসে সালিশি সভাও। তবুও কিস্তির টাকা দিতে রাজি হয়নি মফিজ।
মফিজের পরিবার জানিয়েছে, গত ১৮ তারিখে তুফানগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন মফিজ। কিস্তির টাকা না দেওয়ায় হাসপাতাল চত্বর থেকে মফিজকে অপহরণ করে তারই গ্যারেন্টার। বিষয়টি নিয়ে ওই দিনই তুফানগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন অপহৃতের ছেলে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে গত ২০ তারিখে পুলিশ মফিজকে উদ্ধার করে। এরপর তাকে তোলা হয় তুফানগঞ্জ মহকুমা দায়রা আদালতে। আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরেই সেই চত্বর থেকে ফের মফিজ ও তার স্ত্রী জমিনা বিবিকে অপহরণ করার অভিযোগ ওঠে। এরপর থেকে ওই দুজনের কোনও খোঁজ না মেলায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে পরিবার। অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে মুক্তিপন হিসেবে ৮ লক্ষ টাকা দাবি করা হয় বলেও অভিযোগ। ঘটনার আট দিন পর সোমবার তুফানগঞ্জ থানার দ্বারস্থ হয়েছেন মফিজের ছেলে আব্বাস আলী। কিন্তু অভিযোগ নিতে অস্বীকার করেছে পুলিশ।
এই নিয়ে আব্বাস বলেন, আট দিন হয়ে গেল বাবা মার সাথে কোনওরকম যোগাযোগ নেই। আদৌ তাঁরা বেঁচে আছে না মারা গেছে জানি না। খুব দুশ্চিন্তায় রয়েছি। অচেনা নম্বর থেকে হুমকির পাশাপাশি চাওয়া হচ্ছে মুক্তিপণ। বিষয়টি নিয়ে তুফানগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করতে এসেছিলাম। কিন্তু থানা থেকে বলা হয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে। আমরা জেলা পুলিশ সুপারের কাছে নালিশ জানাবো।
যদিও অপহরণের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন তুফানগঞ্জের ব্যবসায়ী একরামুল হক।তিনি বলেন, এছাড়া আমার কাছে আর কোনও উপায় ছিল না।বন্ধুর লোনের গ্যারান্টার হতে গিয়ে আমি চরম বিপদে পড়েছি। আমার সিভিল ডাউন হয়ে গিয়েছে। আমাকে কোনও সংস্থা আর লোন দিচ্ছে না। বারংবার মফিজকে লোন পরিশোধ করতে বলা হলেও কোনও কাজ হয়নি। তাই শেষ পর্যন্ত মফিজ ও তার স্ত্রীকে আমার বাড়িতে নিয়ে এসে রেখেছি। বিষয়টি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানকে জানিয়েছি। লোনের টাকা পরিশোধ করলেই সমস্যা মিটে যাবে। তবুও আলোচনায় বসছে না মফিজের পরিবার।