আব্দুল হাই, বাঁকুড়াঃ বেশিরভাগ মহিলারা প্রথম সন্তান পুত্র হওয়াই কামনা করে, সেখানে এক ব্যতিক্রমী পরিবার দেখা গেল বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর ব্লকের শ্যামসুন্দরপুর গ্রামে। প্রথম সন্তান কন্যা জন্মগ্রহণ করায় খুশিতে উল্লসিত পুরো পরিবার। খুশি সদ্যোজাত কন্যা শবনম পারভিনের মা রাজিয়া বিবি থেকে শুরু করে বাবা শেখ ইনজামুল সহ দাদু ঠাকুমা থেকে নানা নানিরাও।
গোটা পরিবার এতটাই খুশি যে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে স্বাভাবিকভাবে কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ায় পর স্ত্রী ও শিশু কন্যাকে রীতিমতো গাড়ি সাজিয়ে ধুমধামের সঙ্গে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন দিনমজুর শেখ ইনজামুল কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ায় বধূ নির্যাতনের ঘটনা যখন একের পর এক দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন থানায় নথিবদ্ধ হচ্ছে, সংবাদের শিরনামে উঠে আসছে স্ত্রী সহ সদ্যোজাত কন্যা সন্তানকে মেরে ফেলার ঘটনা সেখানে এক রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে এমন ঘটনা যেন অনন্য নজির গড়ে তুলল। যে ঘটনার সাক্ষী থাকলো বিষ্ণুপুর হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে কর্মীরা। সাক্ষী থাকল গোটা শ্যামসুন্দরপুর গ্রামের মানুষরা। ২ দিনের সন্তানকে আদর করে নাম রাখলেন ‘শবনম’। যে নামের অর্থ ফুলের উপর বিন্দু বিন্দু শিশির ঝরে পরা।
সেই ফুলের মতো সুন্দর শিশুকে কোলে নিয়ে একদৃষ্টিতে নাতনির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে দিদা মঞ্জুরা বিবি বলেন ‘আমর মেয়ের এটাই প্রথম সন্তান। আমরা চেয়েছিলেম মেয়ে যেন প্রথমে লক্ষ্ণী ঘরে আনে। আল্লার কাছে সেই প্রার্থনাই করেছিলাম। তিনি আমার সেই আকুল প্রর্থনা শুনেছেন। তাই আমার মেয়ের কোল আলো করে মেয়ে এসেছে। আমরা সবাই খুব খুশি’। কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার পর শ্বশুরবাড়িতে কে কী বলবে তা নিয়ে বেশ চিন্তায় ছিলেন রাজিয়া বিবি। কন্যা সন্তান হলে যেখানে শ্বশুরবাড়ি বা বাপের বাড়ির মানুষদের গঞ্জনার অন্ত থাকেনা, হতে হয় ‘এক ঘরে’ সেখানে প্রথম সন্তানকে দেখতে এসে কন্যা সন্তান হয়েছে শুনে খুশিতে প্রায় লাফিয়ে উঠেছিলেন সদ্যোজাতর বাবা দিনমজুর শেখ ইনজামুল বা বিল্টু। আর স্বামীর এই আনন্দ দেখে খুশিতে চোখের জল ধরে রাখতে পারেন নি রাজিয়া। তাঁর চমক লাগা তখনো কিছু বাকি থেকে গেছিল। হাসপাতাল থেকে ছুটি মেলার পর সুস্থ অবস্থায় মেয়েকে কোলে নিয়ে বাইরে বেরিয়েই দেখতে পান তাঁর স্বামী বাহারি ফুল দিয়ে একটি গাড়ি সাজিয়ে স্ত্রী ও মেয়েকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছেন। অবিশ্বাস্য সেই ঘটনার ঘোর যেন তখনো কাটিয়ে উঠতে পারেন নি রাজিয়া বিবি।
একমুখ হাসি নিয়ে তিনি বলেন,’আমার প্রথম সন্তান মেয়ে হওয়ায় আমি তো খুশি হয়েছিলামই তবে আমি ভাবতেও পারিনি আমার শ্বশুরবাড়ির এবং বাপেরবাড়ির সবাই এতো খুশি হবেন। আমার স্বামী হাসপাতাল থেকে একেবারে গাড়ি সাজিয়ে মেয়েকে আর আমাকে বাড়ি নিয়ে যাবে সেটা আমার কল্পনাতেও আসেনি। যা দেখে আমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি’। বর্তমানে ডি.এল.এড কোর্সে পড়া রাজিয়া বিবি চান তাঁর মেয়েও যেন ভালভাবে লেখাপড়া করে বড়ো হয়।
কন্যা সন্তান পেয়ে খুশিতে আত্মহারা ইনজামুল বলেন ‘আমার ঘরে মা লক্ষ্ণী এসেছে। ও ঘরে আসাতে আমার কপাল খুলেছে। অনেক কাজের ডাক আসছে। যাঁরা কন্যা সন্তান পেটে রয়েছে জেনে গর্ভাবস্থায় সন্তানকে খুন করে তাঁদের মতো নিকৃষ্ট মানুষ আর কেউ হয়না। ঈশ্বর তাঁদের ক্ষমা করবেন না। কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ায় জন্য যাঁরা স্ত্রীকে মারধর করে নির্যাতন করে তাঁদের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত। মেয়েরা ঘরের লক্ষ্ণী। তাই মা লক্ষ্ণী ঘরে আসায় আমি বা আমার পরিবারের সবাই খুব খুশি’।