ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির জমি দখল কাণ্ডে পুলিশের জালে আরও এক তৃণমূল নেতা

28

শিলিগুড়ি, ৩০ জুলাইঃ ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির জমি দখল কাণ্ডে পুলিশের জালে আরও এক তৃণমূল নেতা। সোমবার সন্ধ্যার পর গ্রেপ্তার হন শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়ি-১ অঞ্চলের তৃণমূল নেতা মহম্মদ আহিদ ওরফে চুটকি। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ (এসওজি) চুটকিকে তাঁর কামরাঙ্গাগুড়ির বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে আসে। এরপর তাঁকে তুলে দেওয়া হয় নিউ জলপাইগুড়ি থানার পুলিশের হাতে। রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ পুলিশের তরফে গ্রেপ্তারির বিষয়টি স্বীকার করে নেওয়া হয়। চুটকির সঙ্গে নাসির আহমেদ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য ধৃতদের শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে বলে পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে। এদিন দুপুরে ধৃতদের জলপাইগুড়ি আদালতে পাঠানো হয়।

কমিশনারেটের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলছেন, ‘সরকারি জমি দখল কাণ্ডে চুটকিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ চুটকির সঙ্গে নাসির আহমেদ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। তবে কোন জমি বা কোন অভিযোগের ভিত্তিতে এই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেটা পুলিশের তরফে প্রকাশ করা হয়নি। এদিন রাত নয়টা নাগাদ থানা চত্বরে দাঁড়িয়ে চুটকির এক পরিজন বলেন, ‘কী কারণে ওকে গ্রেপ্তার করা হল, সেটা নিয়ে পুলিশ কিছু বলছে না।’

পুলিশের একটি সূত্রে খবর, শিলিগুড়ি পুরনিগমের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীমা সরণির বাসিন্দার আশিস দাসের অভিযোগের ভিত্তিতে চুটকিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপরদিকে, নাসির ফুলবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের চুনাভাটি-পশ্চিম ধনতলা এলাকার বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধেও জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে।

দীর্ঘদিন ফুলবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় দাপটের সঙ্গে তৃণমূল অঞ্চল সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন চুটকি। বিতর্কে জড়িয়েছেন বহুবার। বিরোধীরা তো বটেই,দলের অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে বহুবার জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত সিপিএমের শ্রমিক সংগঠনের সদস্য ছিলেন তিনি। তখন থেকেই বিভিন্ন সময় বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএম তাঁকে টিকিট না দেওয়ায় নির্দল হয়ে পঞ্চায়েত সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তৃণমূলে যোগ দিয়ে অঞ্চল সভাপতি হন। এরপর কার্যত রকেটের গতিতে উত্থান হয় তাঁর। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলের সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় অঞ্চল সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন। এরপরও জমি সংক্রান্ত বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি।

এলাকার জমি দখল ও জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে অনেকদিন থেকেই ক্ষোভ জমছিল মানুষের মনে। ওই ঘটনায় বিরক্তি প্রকাশ করে জমি মাফিয়াদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি ব্লক তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হন। ব্লক সভাপতি দেবাশিস প্রামাণিক এবং সহ সভাপতি গৌতম গোস্বামী এই মুহূর্তে আদালতের নির্দেশে জলপাইগুড়িতে জেল হেপাজতে রয়েছেন। গৌতমের গ্রেপ্তারির পর পুলিশি ধরপাকড় কিছুটা ঢিলে হতেই সবেমাত্র অনেকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে এদিন গ্রেপ্তার হলেন চুটকি। এরপর কে, এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেক তৃণমূল নেতার মনে।