নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে কোচবিহারে সিবিআই, প্রায় ৭ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর সজল করকে ছেড়ে দিলেন সিবিআই

0
307

মনিরুল হক, কোচবিহারঃ কোচবিহারেও সিবিআই হানা চলছে। নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে সিবিআই পা পড়ল কোচবিহারে। বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে কোচবিহারের একাধিক জায়গায় পৌঁছে যান সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। কয়েকজনের বাড়িতে অভিযানের পাশাপাশি কোচবিহার রাজারহাটের ট্যাঙনমারি এলাকার একটি বিএড ও ডিএলএড টিচার্স ট্রেনিং কলেজে যান। অন্য দলটি পৌঁছায় এই কলেজের কর্ণধারের বাড়িতে। শ্যামল করের এক ভাই অমল কর ও তাঁদের আরও দুই ভাই কাজল কর ও সজল কর এই ব্যবসা দেখাশোনা করেন। তাঁদের মধ্যে সজল করকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এবং কলেজের কমপিউটারের হার্ড ডিস্ক, ছাত্র ভর্তির পদ্ধতি সবটাই খতিয়ে দেখছেন সিবিআই আধিকারিকরা। একটানা প্রায় সাত ঘন্টা ধরে সিবিআইয়ের সজল করকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

স্থানীয় সূত্রের জানা গেছে, প্রথমে সিবিআইয়ের দলটি চলে যায় ট্যাঙনমারি এলাকায় বিএড ও ডিএলএড টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অন্যতম কর্ণধার শ্যামল করের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে সিবিআই জানতে পারে শ্যামল কর এবং তাঁর ভাই সজল কর আরও দুই ভাইয়ের একত্রে মিলিত ভাবে একটি বিএড কলেজ চালান। পরে শ্যামল কর ছোট ভাই সজলকে নিয়ে সেই বিএড কলেজেও যান সিবিআই আধিকারিকরা। সজল করকে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিবিআই আধিকারিকরা। টানা ৭ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করার পর সজল করকে নিয়ে তার বাড়িতে আসেন সিবিআই কর্তারা। তার বাড়িতে এসে সজল করকে সামনে বসিয়ে রেখে পরিবারের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই আধিকারিকরা। জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন কলেজ ও বাড়ি থেকে বেশ কিছু নথিপত্র সংগ্রহ করেন সিবিআই কর্তারা। পরে সেখান থেকে সজল করকে সিবিআই কর্তারা গাড়িতে করে নিয়ে এসে বিএড কলেজে কোয়াটারে ছেড়ে দেন এবং সিবিআই আধিকারিকরা সেখান থেকে বেরিয়ে যান বলে জানা গিয়েছে।

সুত্রের খবর, শ্যামল কর তার বিএড কলেজে কোন ছাত্র যদি পড়াশুনা করে তাহলে তার চাকরি নিশ্চিত বলে দিতেন। তাই তার ওই কলেজে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি হওয়ার আগ্রহ বেশি ছিল বলে লোকের মুখে প্রচলিত। তার পর নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে যখন একের পর এক রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের তৃনমূল নেতা, বিধায়ক-মন্ত্রীরা গ্রেপ্তার হচ্ছে। তারপর থেকে ওই কলেজের কর্ণধর শ্যামল কর নিখোঁজ। তাকে প্রায় দীর্ঘ ৮–৯ মাস ধরে গ্রামে আর দেখা যায় না বলে জানা গেছে। তারপর আজ সিবিআই আধিকারিকরা নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তের স্বার্থে শ্যামল করের বাড়িতে আসেন। সেখানে শ্যামল কর ও অন্যান্য ভাইদের না পেয়ে ছোট ভাই সজল করের বাড়িতে যান। পরে সজলকে তুলে নিয়ে বিএড কলেজে যান এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে তাকে প্রায় ৭ ঘন্টা জিজ্ঞাসা বাদের পর বাড়িতে ছেড়ে দেন বলে জানা গিয়েছে সিবিআই সুত্রে। যদিও এবিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ সিবিআই আধিকারিকরা।

এদিন এবিষয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত ১ বছর ধরে শ্যামল করকে এলাকায় দেখা যায় নি। তিনি কোথায় আছেন কেউ জানেন না। তাঁর খাগড়াবাড়ি এলাকার বাড়িতেও গিয়েছেন সিবিআই আধিকারিকরা। সিআরপিএফের প্রহরা রয়েছে সেখানেও।

জানা গিয়েছে, শ্যামল কর একসময় প্রাইভেট টিউশানি করতেন। পরে বিএড কলেজ খোলেন। এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, তার কলেজে পড়লে চাকরি নিশ্চিত বলে দাবি করতেন শ্যামল কর। এক সময় দুধের ব্যবসা করলেও সম্প্রতি তার ধনসম্পত্তির ব্যাপক বাড়বাড়ন্ত হয়। আজ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সিবিআই অভিযান চলছে৷ এর মধ্যে কোচবিহারের বেশ কয়েকটি জায়গা রয়েছে৷ নিয়োগ দুর্নীতিতে এই প্রথম সিবিআই অভিযান কোচবিহারে৷

উল্লেখ্য, নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে কোচবিহারের একাধিক জায়গায় তল্লাশির পাশাপাশি মুর্শিদাবাদের অন্তত চার জায়গা-সহ কলকাতার অন্তত দু’টি জায়গায় একযোগে সিবিআইয়ের তল্লাশি অভিযান চলছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে সিবিআইয়ের দল কলকাতা পুরসভা এবং বিধাননগর পুরসভার দুই তৃণমূল কাউন্সিলর যথাক্রমে বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত এবং দেবরাজ চক্রবর্তীর বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছেন কেন্দ্রীয় এজেন্সির গোয়েন্দারা। কলকাতা,মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি কোচবিহার ২ নং ব্লকের রাজারহাটের ট্যাঙনমারি এলাকার একটি বিএড ও ডিএলএড টিচার্স ট্রেনিং তল্লাশি চালাচ্ছে এবং ওই কলেজের কর্ণধর শ্যামল করকে  না পেয়ে তার ছোট ভাই সজল করকে প্রায় ৭ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে জানা গিয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here