লখনউ, ১৩ সেপ্টেম্বরঃ ভোটচুরি ইস্যুতে ফের বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন সমাজবাদী পার্টির (সপা) প্রধান অখিলেশ যাদব। শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে তিনি সরাসরি নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আঙুল তোলেন। তাঁর দাবি, উপনির্বাচনে বিজেপি একাধিক আসনে ‘ভোট ডাকাতি’ করেছে, আর কমিশন সেই বিষয়ে নিশ্চুপ। এমন চলতে থাকলে ভারতেও প্রতিবেশী নেপালের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন সপা সাংসদ।
অযোধ্যা বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপির জয় নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন অখিলেশ। তাঁর অভিযোগ, অন্তত ৫০০০ মানুষকে বাইরে থেকে এনে ভোট দিতে বসানো হয়েছিল। তিনি বলেন, “অযোধ্যাতে এক মন্ত্রীর সহযোগী ধরা পড়েছিল। কমিশনের উচিত ভোট চুরি রুখে দেওয়া। যদি ভোট ডাকাতি বন্ধ না হয়, তাহলে এখানকার মানুষও প্রতিবেশী দেশগুলির মতো রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন।”
শুধু অযোধ্যাই নয়, কুন্দারকি, রামপুর ও মীরাপুর বিধানসভা উপনির্বাচনের ঘটনাও টেনে আনেন অখিলেশ। অভিযোগ করেন, “যখন ওরা ভোটচুরি করতে পারেনি, তখন রিভলভার দেখিয়ে ভোট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।” তাঁর বক্তব্য, নির্বাচন কমিশন যদি গণতন্ত্র রক্ষায় পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিতে পারে।
অখিলেশের এই মন্তব্য আসে নেপালের সাম্প্রতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে। গত ৪ সেপ্টেম্বর নেপালে ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স-সহ প্রায় সব ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করে সরকার। সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান। রাতের মধ্যেই আন্দোলন হিংসাত্মক রূপ নেয়। সরকারি দপ্তর, মন্ত্রীদের বাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ হয়। শেষমেশ চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রী কে.পি. শর্মা ওলি-সহ গোটা সরকারকে ইস্তফা দিতে হয়।
অখিলেশ সতর্ক করে বলেন, “যদি একইভাবে ভারতীয় গণতন্ত্রকে ভোটচুরির মাধ্যমে লাঞ্ছিত করা হয়, তাহলে দেশের মানুষও রাস্তায় নেমে পড়তে পারেন। সেই পরিস্থিতি কারও জন্য শুভ হবে না।”
প্রসঙ্গত, ভোটচুরির অভিযোগ শুধু সপা প্রধানের তরফেই আসছে না। গত ৭ আগস্ট লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীও একাধিক অভিযোগ তুলে ধরেন। তিনি দাবি করেছিলেন, দেশে ছয় ধরনের উপায়ে ভোটচুরি চলছে। এমনকি ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি কমিশনের সাহায্যে বহু আসনে ভোট ডাকাতি করে জিতেছে বলেও অভিযোগ করেন কংগ্রেস নেতা। এরপর থেকেই বারবার এই ইস্যুতে সরব হয়েছেন রাহুল। সম্প্রতি ভোটমুখী বিহারে তিনি “ভোট অধিকার যাত্রা” করেন।
তবে কমিশন এই অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার নাম না করে রাহুল গান্ধীর সমালোচনা করেন। তাঁর বক্তব্য, ‘ভোটচুরি’র মতো আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
এই আবহে অখিলেশ যাদবের মন্তব্য আরও জোরালো হল। রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়েছে তাঁর ইঙ্গিতকে ঘিরে। সপা নেতার বক্তব্য স্পষ্ট-যদি নির্বাচন কমিশন দায়িত্বশীল পদক্ষেপ না নেয়, তবে ভারতের রাজনীতিও আন্দোলনের ঝড়ে কেঁপে উঠতে পারে।
সবমিলিয়ে, ভোটচুরির অভিযোগে বিরোধী শিবির ক্রমশ আক্রমণাত্মক হচ্ছে। সামনে বিহার বিধানসভা নির্বাচন। তাই এই বিতর্ককে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ যে আরও বাড়বে, তা একপ্রকার নিশ্চিত।