কোচবিহার, ৩ ডিসেম্বরঃ ঐতিহ্যশালী কোচবিহারের রাসমেলায় ফুটপাত ব্যবসায়ীদের বসতে না দেওয়ার অভিযোগ তুলে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ ব্যবসায়ীদের। এদিন রাস মেলার মাঝখানে কোচবিহার জেনকিনস স্কুল মোড়ে তাঁরা বিক্ষোভ বসেন। পরে পুলিশ এসে রাস্তায় বসে বিক্ষোভকারী সাথে কথা বলেন এবং অবরোধ ও বিক্ষোভ তুলে নেন। এ বিষয়টি নিয়ে পুরসভার কাছে গেলেও সমস্যা মেটেনি বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। তবে রাস্তা জুড়ে ফুটপাতে ব্যবসায়ীদের বসতে দিতে নারাজ প্রশাসন।
জানা গেছে, রাসমেলায় দোকান না নিয়ে ফুটপাতে ব্যবসা করছে অনেক ব্যবসায়ী। কিন্তু সেই ফুটপাতে ব্যবসা করতে দেবে না পুলিশ প্রশাসন। গতকাল রাতে ফুটপাত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার পর পুলিশ তাদের দোকান সরিয়ে নিতে বলে। এমনকি লাঠি চার্জ করে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ।
তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা রাসমেলায় হকারী ও ফুটপাতে ব্যবসা করে আসছে। মেলার মাঝখানে যে রাস্তা, সেই রাস্তার উপর তাঁরা দোকান দেন। তবে এই বছর ২৭ তারিখে মেলার শুভ উদ্বোধন। সেই দিন থেকে তাঁরা ফুটপাতে ব্যবসা করে আসছে এবং তাঁরা পৌরসভায় যে দৈনিক কর ৩০ টাকা করে দিচ্ছে। কিন্তু গতকাল রাতে পুলিশ এসে তাদের দোকান তুলে নিতে বলেন। এমনকি লাঠি চার্জ করে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে। তারপর তাঁরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখান। পরে পুলিশ এসে তাদের তুলে দেন। পরে তাঁরা পুরসভার চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে তাঁদের ফুটপাতে দোকান করার অনুমতি জন্য আবেদন জানান। কিন্তু পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয় ওটা পুলিশ কি জানাতে হবে।
এদিন এবিষয়ে এক ফুটপাত ব্যবসায়ী জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমরা ফুটপাতে ব্যবসা করে আসছি। কিন্তু কোনদিন এমন সমস্যা হয়নি। গতবার সমস্যা হলেও চেয়ারম্যান স্যার রবীন্দ্রনাথ ঘোষ মহাশয়কে জানালে তিনি সমস্যা সমাধান করে দেন। কিন্তু আমরা পৌরসভার কর দেওয়া স্বত্বেও গতকাল পুলিশ এসে ফুটপাত ব্যবসায়ীদের তুলে দেওয়ায় এবং লাঠি চার্জ করার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। তাই আমরা চাই কোচবিহার পৌরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে আমাদের ফুটপাতে বসার ব্যবস্থা করুক।
এদিন এবিষয়ে কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক নিখিল রঞ্জন দে বলেন,ফুটপাত ব্যবসায়ীদের তুলে দেওয়া ঠিক হবে না। এটা অন্যায়। কারন ওই ফুটপাত ব্যবসায়ীরা সামান্য লাভের আশায় দোকান নিয়ে বসেছেন। তাদের কাছ থেকে ৩০-৫০ টাকার কর ৫০০ টাকা নিচ্ছে। এখানে লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ ব্যবসা করতে আসেন। তাদের সাথে এমনটা করা মোটেও ঠিক নয়। আমি আমার তরফ থেকে কোচবিহার পৌরসভার চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করবো তাদের ফুটপাতে ব্যবসা করার অনুমতি দেন। কারন অনেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসায় লাগিয়েছে। তাঁরা দোকান করতে না পারলে ব্যবসায়ীদের বড়সড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
যদিও ফুটপাত ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ দেখানোর পর পৌরসভায় চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সাথে দেখা করেন এবং তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। পরে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ তাদের বলেন, মেলার আইন শৃঙ্খলার দেখার বিষয় পুলিশের। ওটা পুলিশকে জানাতে হবে।
ফুটপাত ব্যবসায়ীদের রাস্তায় দোকান দিতে দেওয়া হচ্ছে না। সেই বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের তিনি জানান, রাস্তার মাঝখানে কোন দোকান বসলে মেলার মধ্যে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার ব্রিগেড ঢুকতে অসুবিধা হয়। সাধারণ দর্শনার্থীরা এবং ছোট ছোট বাচ্ছারা রাস্তায় চলাচল করে, মেলায় এসে তাদের যাতে কোন অসুবিধা না হয়। সেটা বিষয় দেখার দায়িত্ব পুলিশ প্রশাসনের। আর আমি তো তাদের দোকান দিতে বাঁধা দেই নি। যেখানে ফাঁকা রয়েছে, সেখানে তাঁরা বসে ব্যবসা করুক। আমার তো বাঁধা নেই।