খবরিয়া ২৪ নিউজ ডেস্ক, ১৯ আগস্টঃ রাজনৈতিক জীবনে বহু চড়াই উতরাই প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি। কিন্তু,এবার নয়া অধ্যায় শুরু করলেন একদা হলদিয়ার বেতাজ বাদশা বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ লক্ষ্মণ শেঠ। তার ৭৭ বছর বয়স। সেই রাজনীতিবিদ নতুন করে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন। পাত্রী কলকাতার বাসিন্দা। শহরের একটি বিলাসবহুল হোটেলে উচ্চ পদে কর্মরতা তিনি জানা গিয়েছে এমনটাই। বয়স ৭৭ জন্য কি বিয়ের রিসেপশন এবং মধুচন্দ্রিমা হতে নেই! এবার সেটাও করে দেখালেন লক্ষ্মণ শেঠ। গত ১৮ আগস্ট বিয়ের রিসেপশন ছিল তাঁদের। অনেকেই সেখানে এসেছিলেন। নিউটাউনের পাঁচতারা হোটেলে লক্ষ্মণ শেঠের রিসেপশন হয়ে গেল।
এদিকে লক্ষ্মণ শেঠের মধুচন্দ্রিমা হল নিউটাউনের ইকোপার্কের তাজ হোটেল গ্রুপের তাল কুটিরে। ৭৭ বছর বয়সে নতুন করে জীবন সঞ্জিবনী পেয়েছেন তিনি। প্রাক্তন কমিউনিস্ট নেতা অধুনা প্রদেশ কংগ্রেস সহ–সভাপতি লক্ষ্মণ শেঠ সম্প্রতি বিয়ে করেন ৪৫ বছরের মানসী দে–কে। যদিও এই বিয়ে অবৈধ বলে দাবি লক্ষ্মণ শেঠের পরিবারের। তবে ২৪ মে বিয়ে করলেও আড়াই মাস পর ১৮ অগস্ট বিয়ের রিসেপশন দিলেন তিনি। রীতিমতো কার্ড ছাপিয়ে তা পাঠিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করা হয়েছে। ২০১৬ সালে লক্ষ্মণ শেঠের প্রথম স্ত্রী তথা প্রাক্তন বিধায়ক কবি–সাহিত্যিক আপনজন পত্রিকার সম্পাদিকা তমালিকা পন্ডা শেঠের মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে তখন থেকেই উদাস হয়ে পড়েছিলেন এই বাম নেতা। এখন তমালিকা দেবীর দুই সন্তান এবং বৌমা ও নাতি–নাতনি রয়েছেন। এবার নতুন হাতে হাত দিলেন কংগ্রেস নেতা লক্ষ্মণ শেঠ। ৭৫ বছর বয়সে তিনি বিয়ে করেন। লক্ষ্মণ শেঠের দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম মানসী দে। কলকাতার বাসিন্দা মানসী দে শেঠ (৪৫) একটি পাঁচতারা হোটেল গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার পদে ছিলেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় লক্ষ্মণ শেঠের। পরে তা বিয়ে পর্যন্ত গড়াল। তিনি বিয়ের পর সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেছিলেন, এক ইনিংসে খেলা জমে না। কিন্তু হলদিয়া কি ব্রাত্য থাকবে ? নিজের এলাকা বৌভাতের অনুষ্ঠান করবেন বলে জানান হলদিয়ার দোর্দণ্ডপ্রতাপ প্রাক্তন সিপিএম নেতা অধুনা কংগ্রেস নেতা লক্ষ্মণ শেঠ।
জানা গেছে, নিজের এলাকা হলদিয়ায় না করে বিয়ের প্রীতিভোজ নিউটাউনে ইকো ট্যুরিজম পার্কে হওয়ায় অনেকে উষ্মাপ্রকাশ করেছেন। তাই সবার মন রাখতে আগামী ২৭ এবং ৩০ অগস্ট দু’দিন ধরে প্রীতিভোজ হবে হলদিয়ায়। এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন লক্ষ্মণ শেঠ। সেখানে প্রায় তিন হাজার শুভানুধ্যায়ীকে আমন্ত্রণ করা হচ্ছে। কলকাতার ইকোপার্কের হোটেলে মেনুতে ছিল নানারকমের আইটেম। ইলিশ, চিংড়ি দুই ছিল। পরে পাবদা, চিতল মাছের মুইঠা এবং রকমারি মিষ্টি। সূত্রের খবর, লন্ডন থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল লক্ষ্মণ শেঠের পোশাক। লক্ষ্মণ পত্নী মানসী দেবীর গয়না কেনা হয় তানিষ্ক থেকে। লক্ষ্মণ শেঠের মধুচন্দ্রিমা হল তাল কুটিরে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে লক্ষ্মণ শেঠের স্ত্রী তথা প্রাক্তন বিধায়ক তমালিকা পণ্ডার মৃত্যু হয়। তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি একা হাতে সন্তান এবং সংসার সামলেছেন। একইসঙ্গে রাজনীতির ময়দান এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও তিনি সমানভাবে কাজ করে গিয়েছেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর একাকিত্বে ভুগছিলেন তিনি। সেই সময় তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় মানসীর।
১৯৮২ সাল থেকে তিনবার সুতাহাটা কেন্দ্র থেকে সিপিএমের প্রার্থী হয়ে জয়ী হয়েছিলেন লক্ষ্মণ শেঠ। ১৯৯৬ সালে তিনি তমলুক লোকসভা কেন্দ্র থেকে লড়াই করেছিলেন। কিন্তু, সেই বার পরাজিত হন তিনি। ২০১৪ সালে তাঁকে সিপিএম থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর তিনি নিজে‘ভারত নির্মাণ মঞ্চ’নামক একটি দল গড়েন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে তিনি BJP-তে যোগদান করলেও তাঁকে বছর দু’য়েকের মাথায় বহিষ্কার করা হয়। এরপর কংগ্রেসে যোগদান করেন তিনি।
এক সময় লক্ষ্মণকে হলদিয়ার শেঠ বলা হত। হলদিয়ার একচ্ছত্র সম্রাট ছিলেন তিনি। তাঁর দাপটও ছিল দারুণ। শিল্প শহরে সমস্ত কারখানার সিটু ইউনিয়ন তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন। হলদিয়ায় তাঁর একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। বিএড কলেজ, ডেন্টাল কলেজ কী না। ক্রমে তাঁর বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করে। নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাবও তাঁর মাথা থেকেই এসেছিল। পরবর্তীকালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ইচ্ছেতে দল তাঁকে বহিষ্কার করে।