কোচবিহারে আবারও এনআরসি তাণ্ডব! উত্তম, অঞ্জলি, নিশিকান্তের পর এবার টার্গেট মোমিনা বিবি, অসমের ফরেন ট্রাইব্যুনালের নোটিশে চাঞ্চল্য

732

কোচবিহার, ৩১ জুলাই: এনআরসি ইস্যুতে উত্তপ্ত কোচবিহার! উত্তমকুমার ব্রজবাসী ও আলিপুরদুয়ারের অঞ্জলি শীল, মাথাভাঙ্গার নিশিকান্ত দাসের পর এবার নোটিশ এসে পৌঁছাল কোচবিহারেরই আরেক সাধারণ বাসিন্দা মোমিনা বিবির দরজায়। ৫৮ বছর বয়সি মোমিনার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অসম ফরেন ট্রাইব্যুনাল-এর নোটিশ। তাতে লেখা তাঁকে হাজিরা দিতে হবে ধুবড়ি,অসমে। গতকাল বুধবার পুলিশ এসে তাঁর বাড়িতে নোটিশ দিয়ে যায়। কীসের ভিত্তিতে এই নোটিশ তা বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি।

জানা গেছে, মোমিনা বিবি তুফানগঞ্জ ২ নম্বর ব্লকের প্রথম খন্ড বাঁশরাজা শালবাড়ি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন ৯/২৬ নং বুথ এলাকার বাসিন্দা। মোমিনা বিবি ইতিপূর্বে একাধিকবার নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করেছেন। ভোটার তালিকা, রেশন কার্ড, আধার কার্ড-সহ সমস্ত বৈধ নথিপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমাও দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও এনআরসির কর্তৃপক্ষের তরফে নতুন করে আবার নোটিশ আসায় হতবাক পরিবার। এই ঘটনায় গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে উত্তেজনা ও ভয়। একের পর এক সাধারণ মানুষকে বারবার নোটিশ পাঠিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

এদিন হতবাগ মোমিনা বিবি বলেন, “আমি তো জন্মসূত্রে কোচবিহারেরই বাসিন্দা। জীবনের শুরু থেকেই এখানে ভোট দিচ্ছি। রেশন কার্ড, আধার সব আছে। তবু কেন আমাকে ‘বিদেশি’ হিসেবে দেখা হচ্ছে ?”

এনআরসি নিয়ে এতদিন পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে যেভাবে টার্গেট করা হচ্ছিল,এবার বিষয়টি আরও গভীরে। এবার সরাসরি অসমের ফরেন ট্রাইব্যুনাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদের বিরুদ্ধে নোটিশ এই প্রবণতা ভয়াবহ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলছেন, “যেখানে একজন মহিলা বছরের পর বছর কোচবিহারে বাস করছেন, ভোট দিয়েছেন, সরকারি পরিষেবা নিচ্ছেন তাঁকে এখন অসমে গিয়ে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে ? এটা কোনো যুক্তি মানে ?”

আইনজীবীদের মতে, এটি কেন্দ্রীয় প্রশাসনের এক ভয়াবহ ত্রুটি এবং বেআইনি হয়রানির উদাহরণ। একজন নাগরিককে অন্য রাজ্যে গিয়ে প্রমাণ দিতে বাধ্য করা সংবিধানের পরিপন্থী।

এনআরসি আতঙ্কের নতুন অধ্যায়ে প্রথমবার উত্তমকুমার ব্রজবাসী, দ্বিতীয় অঞ্জলি শীল, এরপর নিশিকান্ত দাস, এখন মোমিনা বিবি। এরা প্রত্যেকেই দীর্ঘদিনের ভারতীয় নাগরিক। তবু একের পর এক নোটিশ তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে, যেন ‘বিদেশি’ হয়ে পড়েছেন তাঁরা নিজ ভূখণ্ডে!

প্রশ্ন উঠছে, এনআরসি নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য প্রশাসনের সমন্বয় কোথায়? পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদের অসমের ফরেন ট্রাইব্যুনাল কীভাবে টার্গেট করছে? কতজন সাধারণ মানুষ এখন এই হয়রানির শিকার ? আজ মোমিনা বিবি, কাল হয়তো আপনিও! সময় এসেছে প্রশ্ন করার—এটা নিরাপত্তা, না নিছক রাজনৈতিক কৌশল?