বিদায়ী প্রধান বিচারপতির প্রশংসা: “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও বিচার বিভাগকে খালি হাতে ফেরাননি”

100

কলকাতা, ১৩ সেপ্টেম্বরঃ বিদায়ের প্রাক্কালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন কলকাতা হাই কোর্টের বিদায়ী প্রধান বিচারপতি টি. এস. শিবজ্ঞানম। শুক্রবার বিকেলে টাউন হলে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও বিচারবিভাগকে খালি হাতে ফেরাননি।” একইসঙ্গে তিনি বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের মধ্যে ভারসাম্য এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দেন।

আগামী সোমবার অবসর নিচ্ছেন বিচারপতি শিবজ্ঞানম। তার আগে বিচারবিভাগীয় দপ্তরের পক্ষ থেকে তাঁকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্ত্রী, হাই কোর্টের একাধিক বিচারপতি, রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, মন্ত্রী মানস ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তসহ বিচার বিভাগের বিভিন্ন আধিকারিক। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিবজ্ঞানমের পর্যবেক্ষণ ছিল অনাড়ম্বর হলেও তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

তিনি বলেন, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের সম্পর্ক একে অপরের উপর নির্ভরশীল। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের স্বার্থে প্রশাসনিক সহযোগিতা অপরিহার্য। তাঁর মতে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার এই সমন্বয় বজায় রাখতে সচেষ্ট ছিল।

তবে এ দিনের বক্তব্যে ছিল খানিক অভিমানও। বিচারপতি শিবজ্ঞানম খোলাখুলি জানান, কেন তাঁকে কলকাতা হাই কোর্টে বদলি করা হয়েছিল, আজও তাঁর জানা হয়নি। তিনি বলেন, “সম্প্রতি এক বিচারপতি আমাকে জিজ্ঞাসা করছিলেন, কেন তাঁকে কলকাতায় বদলি করা হল? আমি তাঁকে বলি, আমার অবসর নিতে আর মাত্র দশ দিন বাকি, অথচ আমিও জানলাম না কেন আমাকে এখানে বদলি করা হয়েছিল!” তিনি আরও যোগ করেন, “বিচারপতি মাদুরেশ প্রসাদও একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন। তবে কলেজিয়াম যেমন আমাদের নিয়োগ করে, তেমনি বদলিও করে। এ নিয়ে আমার কোনও ক্ষোভ নেই।”

যদিও বদলি নিয়ে সংশয় ছিল, কলকাতায় এসে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছেন বলে জানালেন বিদায়ী প্রধান বিচারপতি। তাঁর কথায়, “এই শহর এবং এখানকার মানুষ আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টের সহকর্মী বিচারপতিরা এবং রাজ্য প্রশাসনের সহযোগিতা আমি সব সময় পেয়েছি। তাই এই অভিজ্ঞতা আমার জীবনের অমূল্য সম্পদ।”

আইনজীবী সমাজের তরফেও এদিন বিচারপতি শিবজ্ঞানমকে শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা জানানো হয়। তাঁকে কঠোর অথচ ন্যায়নিষ্ঠ বিচারক হিসেবে বর্ণনা করে অনেকেই বলেন, তাঁর সিদ্ধান্ত ও মন্তব্য ভবিষ্যতেও পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে।

সোমবার অবসর নেওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারপতি শিবজ্ঞানমের দায়িত্বভার শেষ হবে। তাঁর বিদায়ী ভাষণে যেমন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ছিল, তেমনি ছিল প্রশ্নচিহ্নও। তবে সবচেয়ে বড় বার্তা ছিল পারস্পরিক সহযোগিতা ও বোঝাপড়ার গুরুত্ব—যা বিচার বিভাগ ও প্রশাসন, উভয়ের জন্যই সমান জরুরি।