খবরিয়া ২৪ নিউজ ডেস্ক, ৮ সেপ্টেম্বর, কলকাতাঃ রাজ্যের সঙ্গে রাজভবনের সংঘাত বাড়ছে প্রতিনিয়ত।একাধিক বিষয়ে দু’ পক্ষের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। অতি সম্প্রতি উপাচার্য নিয়োগ এবং রাজ্যপালের নিজেকে উপাচার্য ঘোষণা করা নিয়ে জোর চর্চা হয়েছে রাজ্য জুড়ে। চর্চা তুঙ্গে ওঠে রাজ্যপালের বৃহস্পতিবারের বার্তার পর।
এই পরিস্থতিতে রাজ্যপাল তথা রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে শুক্রবার সকালে ধর্নায় বসলেন প্রাক্তন উপাচার্যেরা। রাজভবনের উত্তর গেটের কাছে ধর্নায় বসেছে উপাচার্যদের সংগঠন ‘দ্য এডুকেশনিস্ট’স ফোরাম’। তাঁদের দাবি, সংবিধান মেনে চলুন রাজ্যপাল। স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করা হোক।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেন, ‘‘আইন মেনে কাজ করুন। আইন মেনে উপাচার্য নিয়োগ করুন।’’ আগেই সংগঠন অভিযোগ করেছিল, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পরিচালনা প্রক্রিয়া নিয়ে মিথ্যে কথা বলেছেন রাজ্যপাল। তারপরেই নিজেদের প্রতিবাদ কর্মসূচির কথা জানানো হয়েছিল এই সংগঠনের পক্ষ থেকে।
রাজভবনের সামনে বিক্ষোভ নতুন নয়। নানা সময়ে একাধিক রাজনৈতিক দল সেখানে গিয়ে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ দেখিয়েছে। তবে এবার পথে নেমেছেন রাজ্যের প্রাক্তন উপাচার্যরা। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে উপস্থিত রয়েছেন বিশিষ্ট কবি সুবোধ সরকার, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়, সিধু কানহু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য সহ বহু বিশিষ্ট জন।
রাজ্যপালের পরপর গৃহীত একাধিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই তাঁদের আজকের জমায়েত। তাঁদের বক্তব্য, আইন মেনে কাজ করুন রাজ্যপাল, একই সঙ্গে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের দাবি তুলেছেন তাঁরা। নিজের এক্তিয়ার অতিক্রম করে রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনে হস্তক্ষেপ করছেন রাজ্যপাল, সম্প্রতি একাধিকবার এই অভিযোগে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। রাজ্যপালের ‘বেপরোয়া’ মনোভাবের বিরুদ্ধে বিধানসভায় প্রস্তাব আনারও ইঙ্গিত দেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনের অস্থিরতা ঠেকাতে প্রয়োজনে রাজভবনে ধর্নার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এরপরই বৃহস্পতিবার রাজভবন থেকে এক বিবৃতিতে রাজ্যের বিরুদ্ধে পাল্টা অনিয়মের অভিযোগ আনেন রাজ্যপাল। রাজভবনে বসে বাংলায় বিবৃতি দিয়ে রাজ্যপালের বিস্ফোরক অভিযোগ, “আপনারা জানতে চাইবেন, কেন সরকারের মনোনীত উপাচার্য নিয়োগ করতে পারিনি। তার কারণ হল, তাঁদের মধ্যে কেউ ছিল দুর্নীতিপরায়ণ, কেউ ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেছে, কেউ রাজনৈতিক খেলা খেলছিল। এখন আপনারাই বলুন বিশ্ববিদ্যালয়ে কি এমন অন্তবর্তী উপাচার্য থাকা উচিত যিনি দুর্নীতি করবেন, বা ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করতে পারেন।”
রাজ্যপালের এমন মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান তৃণমূলপন্থী উপাচার্য ফোরাম। বৃহস্পতিবারই তাঁরা জানিয়েছিলেন, রাজ্যপালের এমন মন্তব্যের প্রতিবাদে রাজভবনে ধর্নায় বসবেন। সেই মতো শুক্রবার সকাল ১১টায় নর্থ গেটের বিপরীতে ধর্নায় বসেছেন তৃণমূলপন্থী উপাচার্য ও শিক্ষাবিদরা। তাঁদের বক্তব্য, “এভাবে রাজ্য এবং রাজ্যের নিযুক্ত শিক্ষাবিদদের অপমান করার অধিকার রাজ্যপালের নেই। তাঁর ওই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।”